মুসলিমরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করে। ইসলাম এটাই শিক্ষা দিয়েছে। ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ হচ্ছে আল কুরআন। এটা নযিল হয়েছে নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর উপর। পবিত্র কুরআনে মুসলমাদের জন্য সকল বিষয়ের দিকনির্দেশনা দেয়া আছে। শূকরের গোশত খাওয়া হারাম। এই বিষয়ে পবিত্র কুরআন স্পষ্টভাষায় বলেছে।

১. কুরআনে নিষিদ্ধ: পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়াছে মৃতজীব, রক্ত, শূকরের গোশত, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নামে যবেহকৃত জীব এবং কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে, আহত হয়ে, ওপর থেকে পড়ে গিয়ে বা ধাক্কা খেয়ে মরা অথবা কোন হিংস্র প্রাণী চিরে ফেলেছে এমন জীব, তোমরা জীবিত পেয়ে যাকে যবেহ করে দিয়েছো সেটি ছাড়া। আর যা কোন বেদীমূলে যবেহ করা হয়েছে (তাও তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে।) এ ছাড়াও শর নিক্ষেপের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য নির্ণয় করাও তোমাদের জন্য জায়েয নয়। এগুলো ফাসেকীর কাজ। আজ তোমাদের দীনের ব্যাপারে কাফেররা পুরোপুরি নিরাশ হয়ে পড়েছে। কাজেই তোমরা তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় করো।

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি ( কাজেই তোমাদের ওপর হালাল ও হারামের যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা মেনে চলো।) তবে যদি কোন ব্যক্তি ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে ঐগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি জিনিস খেয়ে নেয় গুনাহের প্রতি কোন আকর্ষণ ছাড়াই, তাহলে নিসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী। (মায়েদা: আয়াত,৩)

২. বাইবেলে নিষিদ্ধ: বাইবেল এটা পবিত্র কুরআনের আগে নাযিল হয়েছিলো। কুরআনে এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো পূর্বের কিতাবে নিষিদ্ধ ছিলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শূকরের গোশতের বিষয়টা।

বাইবেল এর তৃতীয় বইয়ে বলা আছে, ‘অন্য কিছু জন্তুদের পাযের খুর দু’ভাগ করা, কিন্তু তারা জাবর কাটে না, ঐসব জন্তু খাবে না। শূকর সেই ধরণের, সুতরাং তারা তোমাদের পক্ষে অশুচি। ঐসব প্রাণীর মাংস খাবে না। এমনকি তাদের মৃত দেহও স্পর্শ করবে না, তা তোমাদের পক্ষে অশুচি। [Leviticus 11:7-8]

এরকম অনুরূপ আরও বেশি কিছু উদাহারণ বাইবেলের বিভিন্ন সংস্করণে লক্ষ্য করা যায়। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের পঞ্চম গ্রন্থ ডিউটেরেনোমি (১৪:৮)এবং ঈসায়া (৬৫:২-৫) এ উল্লেখ করা আছে।

৩. এটা নোংরা প্রাণী : শূকর সেখানে বাসা করে সে সেই অঞ্চলকে বসবাসের অযোগ্য করে ফেলে। কেননা এই প্রাণীটি বসবাস করে হচ্ছে গোবর, ময়লা ও আবর্জনার মধ্যে। অবশ্য এটাও যুক্তিসঙ্গত যে, উন্নত দেশে শুকর খুব পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর জায়গাতে বসা করে।

তারপরেও এই প্রাণীটির মধ্যে পবিত্রতা গ্রাস করার ক্ষমা খুবই বেশি। ইসলাম এই প্রাণীকে সম্পূর্ণ নাপাক হিসাবে ঘোষণা করেছে।

৪. গবেষণা উঠে এসেছে বিভিন্ন ক্ষতিরক দিক : বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে শূকরের গোশত খাওয়ার কারণে পিনওয়ার্ম এবং হুকওয়ার্মের মত বিভিন্ন কৃমি জন্ম নেয়। এই কৃমিগুলো মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

এই কৃমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে ‘টানিয়া সোলিয়াম’ প্রজাতির কৃমি। এগুলো মানবদেহের অন্ত্রের মধ্যে বাস করে। এটি মানবদেহের রক্তের শিড়ায় ডিম পাড়ে, এবং রক্তের মাধ্যমেই এই ডিমগুলো সাড়া শরীরে ছড়িয়ে পরে।

এটা মস্তিষ্কে প্রবেশ করলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস থেকে শুরু করে মস্তিষ্ক অচল করে দিতে পারে। চোখে প্রবেশ করতে পারলে চিরতলে অন্ধত্ব বরণ করতে হবে। এই কৃমি মানবদেহের যেই অঙ্গে প্রবেশ করবে, সেটিই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
অনেকেই মনে করেন যে, শূকরের গোশত ভালো করে রান্না করতে পারলে সেটা আর কোন ক্ষতি করেনা।

এটা আসলে তাদের একটা ভূল ধারণা। গবেষণায় দেখা গেছে আমেরিকায় শতকরা ২৪ জন নারী শূকরের গোশত ভালো করে রান্না করার পরেও তাদের মধ্যে ২২ জনই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এছাড়াও আরো একটি ক্ষতিকারক কারণ হচ্ছে শূকরের গোশতে প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে। আর এই চর্বি খাওয়ার কারণে তা মানুষের শরীরের স্বাভাবিক রক্ত চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে। এই চর্বি রক্ত চলাচলের পথে জমাট বাঁধে, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগও হতে পারে।

ইসলাম শূকরের গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ করার কারণে অনেকে অনেক কথা বলে থাকেন। এটা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। গবেষকরা অবশ্য প্রমাণও করেছেন শূকরের গোশতের ক্ষতিকারক দিকগুলো।

শূকরের গোশত নিষিদ্ধ হওয়া মুসলমানদের জন্য একটি আশীর্বাদ। সূত্র: টপ স্টোরিস

 


Comments