আবার এলো নামকরা স্কুলে ভর্তির মৌসুম

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ‘ভর্তি-মৌসুম’ আবার এসেছে। প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি কার্যক্রম চলে।

এটি সাধারণ প্রক্রিয়া হলেও রাজধানীসহ দেশের প্রধান শহরে নামকরা স্কুলে ভর্তি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে দারুণ স্নায়ুচাপ সৃষ্টি হয়। অন্যান্য বছরের মতো এবারও মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা ভর্তি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত নীতিমালায় এবার সব সরকারি হাইস্কুলে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব আছে। এ ছাড়া আগের দু’বছরের মতোই এবার এসব স্কুলে মোট আসনের ৫৯ শতাংশ কোটায় ভর্তির প্রস্তাব আছে। এগুলো হচ্ছে- ‘এলাকা’, ‘সরকারি প্রাইমারি স্কুল’, ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ‘প্রতিবন্ধী’ ও ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী’ কোটা।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) উপপরিচালক একেএম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সরকারি হাইস্কুলে ভর্তির বিষয়ে একটি নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এতে বেশির ভাগ প্রস্তাবনা গত বছরের মতোই। তবে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নতুন কোনো প্রস্তাব এলে তা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।’

সরকারি এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিবছর ঢাকায় গড়ে ২ লাখের বেশি শিশু প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। কিন্তু মাত্র ৪৫-৫০ হাজার শিশু পছন্দের স্কুলে ভর্তি হতে পারছে। অপরদিকে ঢাকা শহরে প্রায় অর্ধলাখ কিন্ডারগার্টেন ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে। আছে তিন শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবকদের পছন্দের বিচারে সামনের দিকে নেই। এ ক্ষেত্রে হাইস্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক স্তর থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবকদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। সে কারণে ৩৫টি সরকারি হাইস্কুল এবং অর্ধশতাধিক নামকরা বেসরকারি হাইস্কুলে অভিভাবকরা ভর্তি মৌসুমে এক প্রকার হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ঢাকার বাইরে বড় শহরগুলোতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের কাছে পছন্দের বিচারে শীর্ষে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্কুল আবেদন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। কোনো প্রতিষ্ঠান হাতে হাতে আবার কোনোটি অনলাইনে ফরম দিচ্ছে। অভিভাবকদের পছন্দের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন শনিবার ২৫ অক্টোবর থেকে আবেদন নিচ্ছে। ১ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইন আবেদন করা যাবে। আবেদন বাবদ ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম শ্রেণীর আবেদন শেষে উন্মুক্ত লটারির আয়োজন করা হবে। আবেদন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য কলেজের ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে ২য় থেকে ৮ম শ্রেণীতে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের পর প্রকাশ করা হবে।

তেজগাঁওয়ের বিএএফ শাহীন কলেজে কেজি স্তরে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফরম বিতরণ ও জমা নেয়া শুরু হয়েছে। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ফরম কেনা যাবে। জমা দেয়া যাবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত।

ফরমের দাম ২শ’ টাকা। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি যেসব শিশুর বয়স ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে কেবল তারাই আবেদন করতে পারবে।

কুর্মিটোলার বিএএফ শাহীন কলেজে কেজি থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে শিক্ষার্থী ভর্তির ফরম ২৫ অক্টোবর বিতরণ শুরু হয়েছে। চলবে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত।

২০০ টাকার বিনিময়ে কিনতে হবে ফরম। ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ফরম জমা দেয়া যাবে। কেজি ও প্রথম শ্রেণীতে লটারিতে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। অন্যান্য স্তরে শিক্ষার্থী নির্বাচিত হবে পরীক্ষার মাধ্যমে।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে ১৫ নভেম্বরের পর ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম।

ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল ও কলেজে এবার প্রথম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হবে না। দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তির ফরম বিতরণ শুরু হবে ১১ নভেম্বর।

ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি গার্লস স্কুলে ১৬ নভেম্বর ফরম বিতরণ শুরু হবে। এ প্রতিষ্ঠানে ১ম, ২য়, ৩য়, ৫ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। নার্সারি ও কেজি স্তরেও ছাত্রী ভর্তি করা হবে।

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ও কলেজে ৩ নভেম্বর নার্সারি-কেজিসহ প্রাথমিক স্তরের ভর্তি ফরম বিতরণ শুরু হবে। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবুল হোসেন জানান, নবম শ্রেণী পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণীতেই কম-বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

তবে বাংলা ভার্সনে প্রাক-প্রাথমিক ও ইংরেজি ভার্সনে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি নেয়া হবে। ইংরেজি মিডিয়ামে নার্সারি থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। ভর্তির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে (www.wlfsc.edu.bd) পাওয়া যাবে।

সরকারি হাইস্কুলে ভর্তি : সরকারি হাইস্কুলে ভর্তির বিষয়ে গত বছর ২৯ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়। এবারে বৈঠকের সময়সূচি অবশ্য এখন পর্যন্ত ঠিক করা হয়নি। তবে মাউশি থেকে একটি খসড়া নীতিমালা করে রোববার মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।

মাউশির কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য বছরের মতোই ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ফরম বিতরণ-জমা কাজ চলবে।

ভর্তির লটারি ও পরীক্ষা হবে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। জানা গেছে, রাজধানীর ৩৫টি হাইস্কুলের মধ্যে ১৬টিতে প্রথম শ্রেণী আছে।

বাকি স্কুলের কোনোটিতে তৃতীয় বা তার উপরের বিভিন্ন শ্রেণীতে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। গত বছর ৩০ নভেম্বর রাতে এসব স্কুলে ভর্তির আবেদন নেয়া শুরু হয়।

 


Comments