প্যারাডাইস পেপারস বিশ্বের ২৫ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেন ও মালিকানা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যভাণ্ডার বা ডাটাবেজ, যে প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক পৃথিবীর ১৮০টি দেশের ধনী, সুপরিচিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

১ কোটি ৩৪ লাখ গোপন নথির সমন্বয়ে গঠিত এই ডাটাবেসে রয়েছে ১৪শ’ গিগাবাইটেরও বেশি ডাটা।

নথিগুলোর প্রায় ৬৮ লাখ এসেছে অফশোর আইনি সেবা সংস্থা অ্যাপলবাই এবং কর্পোরেট সেবা সংস্থা এস্টেরা থেকে। ২০১৬ সালে এস্টেরা আলাদা হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান দু’টি একসঙ্গে অ্যাপলবাই নামে কর্মকাণ্ড চালাত।

আরও ৬০ লাখ নথি প্রায় ১৯টি আদালতের কর্পোরেট রেজিস্ট্রি থেকে বের করা। আদালতগুলোর বেশিরভাগই ক্যারিবীয় অঞ্চলের।

বাকি অল্প কিছু নথি পাওয়া গেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক ট্রাস্ট এবং কর্পোরেট সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান এশিয়াসিটি ট্রাস্ট থেকে।

প্যারাডাইস পেপারসে ফাঁস করা নথিতে রয়েছে ১৯৫০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় ৭০ বছরের তথ্য।

কেন অনুসন্ধানের শীর্ষে অ্যাপলবাই?

আইনি সংস্থা অ্যাপলবাইয়ের সদর দপ্তর বারমুডায়। ১৮৯০-এর দশক থেকে বিশ্বব্যাপী কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এই কোম্পানি বিদেশের বিচারব্যবস্থায় কম বা শূণ্য করহারে কাজ করতে তাদের গ্রাহকদের সাহায্য করে থাকে। তাই বর্তমানে এটি হয়ে উঠেছে অফশোর আইনি সেবা দানকারী বিশ্বের সবচেয়ে বড় দশ প্রতিষ্ঠানের একটি।

ফাঁস করা তথ্যে দেখা যায়, অ্যাপলবাইয়ের সবচেয়ে বেশি ক্লায়েন্টের ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের, ৩১ হাজারের বেশি। এরপর প্রায় ১৪ হাজার রয়েছে যুক্তরাজ্যের ঠিকানা এবং ১২ হাজারেরও বেশি বারমুডার।

প্যারাডাইস পেপারসে রাজনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তা
প্যারাডাইস পেপারসে ১৪ জন বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিশ্বের কমপক্ষে ৪৭টি দেশের ১২৭ জন রাজনীতিক এবং সরকারি কর্মকর্তার সম্পদ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দলিল রয়েছে।

প্যারাডাইস পেপারস ফাঁসে সম্পৃক্ত সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম
গত বছরের এপ্রিলে কর ফাঁকির তথ্য ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন ফেলেছিল পানামা পেপারস। পানামা পেপারসের মতো এবারও প্যারাডাইস পেপারস নামে অর্থ কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করেছে সুজডয়েচে জাইতুঙ্গ নামের জার্মানির এক সংবাদপত্র। নথিগুলো সংগ্রহ করে পত্রিকাটি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)-এর কাছে প্রকাশ করে দেয়। বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের প্রায় একশ’টি মিডিয়া গ্রুপ নথিগুলো খতিয়ে দেখছে।

সংখ্যার হিসেবে, মূলত ৩৮১ জন সাংবাদিক নতুন এই প্রকল্পটির অনুসন্ধান, ফাঁসসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এ কাজে ৬৭টি দেশের ৯৬টি মিডিয়া পার্টনার যুক্ত।

প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে পানামা পেপারস বনাম প্যারাডাইস পেপারস
পানামা পেপারসে ফাঁস হওয়া নথির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ। এদিক দিয়ে প্যারাডাইস পেপারসের আকার বড়। কেননা এতে নথি আছে ১ কোটি ৩৪ লাখের বেশি।

কিন্তু ডাটাবেসের আকারের হিসেবে প্যারাডাইস পেপারসের (১৪শ’ গিগাবাইট) তুলনায় পানামা পেপারস (২৬শ’ গিগাবাইট) অনেক বড়।

প্যারাডাইস পেপারসের তথ্য অনুসন্ধান ও ফাঁসের কাজে যুক্ত সাংবাদিকের সংখ্যা (৩৮১) পানামা পেপারসের (৩৭৬) চেয়ে বেশি।

তবে মিডিয়া পার্টনার ও সংশ্লিষ্ট দেশের হিসেবের দিকে তাকালে দেখা যায়, পানামা পেপারসের সঙ্গে যুক্ত ছিল ৭৬টি দেশের একশ’রও বেশি মিডিয়া পার্টনার। আর প্যারাডাইস পেপারসে আইসিআইজে এখন পর্যন্ত ৬৭টি দেশের ৯৬টি মিডিয়া পার্টনারকে যুক্ত করেছে।

লেখকঃ তানজীমা এলহাম বৃষ্টি

 


Comments