জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আফসার আহমদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার ঔরসজাত সন্তানকে অস্বীকার করার লোমহর্ষক কাহিনী বেরিয়ে এসেছে একটি অভিযোগ পত্রে। জাবি উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রটি- এই অধ্যাপকের ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে বিবাহ করা, সন্তান জন্ম দেয়ার মধ্যবর্তী ও পরবর্তী সময়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে।

এমনকি সন্তানসহ স্ত্রীকে হত্যা ও দাম্পত্য সময়ের ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশ করার হুমকিও প্রকাশ করেছে এই অভিযোগপত্র। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ও ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী হিসেবে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হই।

বর্তমানে আমি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের পিএইচডি’র শিক্ষার্থী।

স্নাতক ১ম বর্ষে কলা ও মানবিক অনুষদে প্রথম স্থান অধিকার করলে অধ্যাপক আফসার আহমদ নিজেই আমাকে খুঁজে বের করে পরিচিত হন।

২০০৯ সালে তিনি আমাদের ২০৯ নং কোর্স পড়াতেন। স্নাতকে ভালো ফলাফল করায় তিনি আমার সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা এবং ধীরে ধীরে অত্যন্ত সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। সে সময় তিনি আমাকে ধারণা দেন যে, আমি তার প্রিয় শিক্ষার্থীদের একজন।

এভাবে সময়ের সঙ্গে আমাদের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কটা অনেক বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সাংসারিক বিভিন্ন কথা বলে আমাকে ধারণা দেয় যে, সে পারিবারিক জীবনে অসুখী। অসুখী জীবন, হতাশা, অসহায়ত্ব, ভালোলাগা, মন্দলাগা এইসব কিছু এবং সঙ্গে বিভিন্ন রকম ঘটনার উল্লেখ করে সে আমাকে বলে যে, সে তার স্ত্রীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে লজ্জিত বোধ করে।

তিনি বলেন, তার বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে যে সম্পর্ক আছে তা কেবল সামাজিকতার। শুধু সন্তানের জন্যই তাদের বিবাহ জীবনটা টিকিয়ে রেখেছে। আফসার আহমদের অসুখী জীবন ও অসহায়ত্বের কথা জেনে একসময় তার প্রতি আমার মায়া জন্মায়। আর সেই মায়াকে কাজে লাগিয়েই সে আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে এক পর্যায়ে প্রণয়ের সম্পর্ক স্থাপন করে।

২০১৫ সালের নভেম্বরের মধ্যেই তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হবে বলে আমাকে জানায়। এরপর প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই আমার মধ্যে এমন বিশ্বাস তৈরি করে ২০১৫ সালের ২৪শে নভেম্বর শরীয়ত মতে সে আমাকে বিবাহ করে।

প্রথম স্ত্রীর কাছে লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে সে আমাদের বিবাহের বিষয়টি গোপন রাখতে বলে আমাদের সম্পর্ক লুকায়িত রাখে।


২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমি প্রথম অন্তঃসত্ত্বা হলে তার ডাক্তার ভাই ও তার এক বন্ধুর বরাত দিয়ে আমার গর্ভের সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ার ভয় দেখিয়ে আমাকে গর্ভপাত করানো হয়। ২০১৬ সালের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে সে আমাকে আবারো শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ করে।

এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে আমি দ্বিতীয় বার অন্তঃসত্ত্বা হলে আফসার আহমদ আমার সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বহাল রাখে। আমাকে এই সন্তানটিও জন্ম না দিতে নানাভাবে ভয় দেখায়।

এমনকি বলে যে, সন্তান জন্ম দিলে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট দ্বারা পিতৃপরিচয় মিথ্যা ও আমার সঙ্গে বিবাহের বিষয়টিও মিথ্যা বলে প্রমাণ করবে। এসময় গর্ভের সন্তানসহ আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। প্রাণ ভয়ে আমি আত্মগোপন করি।

এরপর আত্মীয়-পরিজনহীন অনিরাপদ পরিবেশে গত ২২শে সেপ্টেম্বর আমি একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেই। তার ঠিক দুইদিন পর আফসার আমাকে তালাকের নোটিশ পাঠায়। এরপর সে এবং তার পরিবার মিলে আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের নানামুখী হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

আমি যদি আমার সঙ্গে ঘটিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলি কিংবা আইনের সহযোগিতা নিই তবে তারা আমাকে মিথ্যা অভিযোগের শাস্তি দিবে এমন হুমকি দিতে থাকে।

সে আমার মোবাইল ট্র্যাকিংসহ আমার গতিবিধির উপর নজরদারি করছে। ফলে আমি আমার পরিবারবর্গ নিয়ে প্রাণভয়ে দিন যাপন করছি। তার প্রথম স্ত্রী, মেয়ে এবং জামাতা আমার কর্মক্ষেত্রে গিয়ে আমার সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের কাছে আমার সম্পর্কে নানা অপবাদ ছড়িয়ে ক্রমাগত আমার সম্মানহানি করে যাচ্ছে।

ক্ষমতাবান আত্মীয়দের জোর দেখিয়ে তার প্রথম স্ত্রী এবং জামাতা আমাকে হুমকি দেয় যে, তারা আমাকে গুম ও খুন করে ফেলবে।

আমার সমস্ত পরিবারকে জঙ্গি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে, আমার বোনের ছেলেমেয়েদেরকে ধরে নিয়ে যাবে, আমার বোনের মেয়েকে পুলিশের কাস্টডিতে ধর্ষণ করাবে, আমাকে ও আমার বোনকে বেশ্যা হিসেবে সমাজের লোকদের কাছে পরিচিত করাবে, আমাকে ও আমার পরিবারে চাকরিরত সদস্যদের চাকরিচ্যুত করাবে।

এসব কিছুতে যদি কাজ না হয় তবে আফসার আহমদের সঙ্গে আমার ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশ করে দেবে। আফসার আমাকে শুধু তালাকের নোটিশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি। সে আমার সন্তান ও আমার বিয়ের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে নানাজনের সঙ্গে বাজে কথা বলে বেড়াচ্ছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষিকা আফসার আহমদের এই সব কাজকে সুস্পষ্ট পেশাগত অসদাচরণ উল্লেখ করে তার নৈতিকতার স্খলন ও অসদাচরণের জন্য তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ শাস্তির দাবি করেন। ভবিষ্যতে যেন আর কোনো শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি উপাচার্যের কাছে বিনীত অনুরোধ জানান।

অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক আফসার আহমদ বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু শুনিনি। যদি এমন অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আসে তবে আমি তা আইনিভাবে মোকাবিলা করবো।’

উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


Comments