পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে সায় পাওয়া গেছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এ পদ্ধতি চালু করতে চায় সরকার। এজন্য একটি রূপরেখা তৈরি করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। চলতি সপ্তাহ একটি কমিটি করা হবে।

বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ সম্মতির কথা জানান ভিসিরা। তবে এ পদ্ধতি অধিকতর স্বচ্ছ করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউজিসির চেয়ারম্যান  বলেন, প্রেসিডেন্টের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা এসেছিলেন।

সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা দিক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আলোচনার বড় অংশ ছিল গুচ্ছ ভর্তি। সেখানে সব ভিসিরা সায় দিয়েছেন। কীভাবে এ পদ্ধতি চালু করা যায় তা নির্ধারণ করতে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক ভিসি জানান, প্রেসিডেন্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা গুচ্ছ ভিত্তিক ভর্তির ব্যাপারে একমত হয়েছি। আগামী বছর থেকে এ পদ্ধতি কীভাবে চালু করা যায় সেটি নিয়ে এখন আলোচনা হবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ এটি নিয়ে বৈঠক করবেন। চলতি মাসে এই বৈঠক করার চিন্তা করছেন ভিসিরা। তারা জানান, সমন্বিত ভর্তি চালু করতে একটু সময় লাগবে।

আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গুচ্ছ ভর্তি চালু করার করা সম্ভব হবে।

তবে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী বছর না হলেও পরের বছর চালু করা সম্ভব হবে।

ভিসি পরিষদের সভাপতি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর হারুন-অর-রশিদ বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে আর জটিলতা নেই। প্রেসিডেন্টের অনুশাসন ফলো করে এখন এটি বাস্তবায়ন শুরু হবে।

তিনি বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার গাইড লাইন তৈরি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সবাই বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। কমিটি সমন্বয় করে ভর্তি নীতিমালা তৈরি করবে।

প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন জানান, প্রেসিডেন্ট প্রতিনিধিদলকে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তিচ্ছু বিশেষ করে ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের ভর্তিকালীন দুর্ভোগ কমাতে সমন্বিত সহজ ভর্তি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা দরকার।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় বিশেষ করে মেয়েদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন কি ওই সময় বিভিন্ন এলাকায় তাদের মসজিদেও অবস্থান করতে হয়েছে।

এই সমস্যায় সমন্বিত সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার জন্য তিনি ভিসি ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।


২০০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার সংস্কার করতে তখনকার শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে বৈঠক করেন। তাতে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তির প্রস্তাব দেয়া হয়। তখন এ পদ্ধতির সুফল শিক্ষার্থীরা

পাবে বলে অধিকাংশ ভিসিই একমত পোষণ করলেও বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব হওয়ার আশঙ্কা করেন। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ভিসিদের নিয়ে বৈঠক করেন।

ওই বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) কয়েকটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় অসম্মতি জানায়। ২০১০, ২০১১ এবং ২০১২ সালেও এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ভিসিদের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রতিবারই বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে সময় নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত বছরের জুলাই মাসেও এ পদ্ধতি প্রণয়নের বিষয়ে ভিসিদের নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী।

তখনও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পদ্ধতির পক্ষে সম্মতি দিলেও বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতির প্রস্তাবের বিপক্ষে মতপ্রকাশ করে। তখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিশ্রবি) এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অভিন্ন পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণাও দেয়।

তবে পরে শাবিপ্রবিতে আন্দোলনের কারণে এ উদ্যোগও ভণ্ডুল হয়ে যায়। বৈঠকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্স, শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয়, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢালাওভাবে ক্লাস নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।

বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসেনসহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

 


Comments