ডা. সঞ্চিতা বর্মন

বর্তমান বিশ্বে যে রোগগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। এটি কোন জীবাণু ঘটিত বা ছোঁয়াচে রোগ নয়। শরীরে প্রয়োজনীয় হরমোন ইনসুলিনের অভাবে অথবা ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ার কারণে এই রোগ দেখা দেয়।

অতিরিক্ত মোটা ব্যক্তি যারা অধিক খাদ্য গ্রহণ করেন এবং যারা কায়িক পরিশ্রম করেন না বা কম করেন তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে পূর্ব পুরুষের এই রোগ থাকলে ডায়াবেটিস হতে পারে। গর্ভকালীন সময়েও এই রোগ হতে পারে।

আগে বলা হতো কোন ব্যক্তির বারবার প্রস্রাব হলে সে ডায়াবেটিসে বা বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে বার বার প্রস্রাব হলেই ডায়াবেটিস না বরং বিভিন্ন উপসর্গ পর্যালোচনা করে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করে কেবল ডায়াবেটিস রোগ শনাক্ত করা যায়।

খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৭ মিলিমোল/লিটার বা তার বেশি হলে এবং খাবার ২ ঘণ্টা পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ১১.১ মিলি মোল/লিটার বা তার বেশি হলে ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

ডায়াবেটিস মূলত ২ ধরনের। টাইপ-১ বা ইনসুলিন ডিপেনডেন্ট ডায়াবেটিস মেলাইটাস যা ইনসুলিন উত্পাদন কম হলে বা না হলে দেখা দেয়। টাইপ-২ বা নন ইনসুলিন ডিপেনডেন্ট ডায়াবেটিস মেলাইটাস যা ইনসুলিন ঠিকমত কাজ না করলে বা উত্পাদন অনুপাতে রোগীর শরীরের ওজন বেশি হলে দেখা দেয়।


এছাড়াও গর্ভকালীন সময়েও রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। কিন্তু সন্তান জন্ম দানের পর সেরে যায়। কিন্তু সচেতন না থাকলে পরবর্তীতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ডায়াবেটিস হলেই ভয়ের কিছু নেই যদি তা নিয়ন্ত্রণে থাকে। পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রম যেমন-দৈনন্দিন কাজ-কর্ম, নিয়মানুযায়ী হাঁটা ও ব্যায়াম করা, উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের ওজন সঠিক রাখা ইত্যাদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।


পাশাপাশি চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন বা ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিতে হবে। অনেক সময় রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গেলে বা বেড়ে গেলে রোগী অসুস্থ বোধ করতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ মেপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অনেকে ডায়াবেটিস হলে খাবার একেবারেই বন্ধ করে দেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে জটিলতা আরো বেড়ে যায়। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইড্রেডযুক্ত খাবারের চেয়ে প্রোটিনযুক্ত খাবারের সংখ্যা বেশি থাকে। পাশাপাশি প্রতিদিন মৌসুমি ফলের মধ্যে যে কোন ১টি ফল খেতে হবে।


এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের হাত-পায়ের যত্ন নিতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের যে কোন ক্ষত শুকাতে সময় নেয়। তাই সতর্ক থাকতে হবে যেন শরীরে কোন ক্ষত না হয়। ধূমপান, মদ্যপান বা সাদা পাতা-জর্দ্দা দিয়ে পান খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।

দৈনিক ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। যাদের এখনও ডায়াবেটিস হয়নি কিন্তু হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেই ক্ষেত্রে তাদেরও সচেতন থাকতে হবে।

লেখক: ত্বক, লেজার এন্ড এসথেটিক বিশেষজ্ঞ

 


Comments