ব্যাপক উত্থান ও পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। গত কয়েক মাস ধরে বাজারে এ ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই মাস ধরে মুদ্রানীতিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নীতিগত বিষয়ের কারণে বাজারে বেশ প্রভাব পড়েছে।

কখনও সূচক ঊর্ধ্বমুখী আবার কখনও নিম্নমুখী হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক ইস্যুও প্রভাব ফেলেছে পুঁজিবাজারে। তাছাড়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারীর বিষয়টিও শেয়ারবাজারের সূচক ওঠানামায় প্রভাব ফেলেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যে দেখা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর ডিএসইর সার্বিক মূল্য সূচক ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট ছিল। এরপর কমতে কমতে গত ২৪ ডিসেম্বর ১৭৭ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৫৯ পয়েন্টে নেমে আসে। এরপর ৬ কর্মদিবসের মধ্যে ১৫৯ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩১৮ পয়েন্টে উঠে আসে।

৮ কর্মদিবসের মধ্যে সূচক আবারও ২২০ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৫৭ পয়েন্টে নেমে আসে। এরপর ৬ কর্মদিবসের মধ্যে ডিএসইএক্স ১৪৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২০৬ পয়েন্টে উঠে যায়। ১১ কর্মদিবসের মধ্যে ডিএসইএক্স ২৭০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯৩৬ পয়েন্টে নেমে যায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার ডিসেম্বর মাস থেকেই মুদ্রানীতি নিয়ে নানা গুজব ওঠে বাজারে। এ নিয়ে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে বাজার বেশ সরব ছিল। কখনও নির্বাচনের বছর উপলক্ষ্যে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতির গুজব উঠে। ফলে সূচক বাড়ে।

পরে আবার মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক হবে বলেও কথা উঠে এসে সূচক পড়ে যায়। পরে ব্যাংকের ঋণ আমানত কমানো নিয়ে গুজব ও তা কমানোর পর বাজারে আবারও ব্যাপক দরপতন হয়। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রায় কেন্দ্র করেও বাজারে পতন হয়েছে। সর্বশেষ ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী কে হচ্ছে তা নিয়ে নানা গুজবে প্রভাব পড়ে বাজারের সূচকের উপর।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে উত্থান পতন থাকাই স্বাভাবিক। বরং উত্থান পতন হলে বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা ভালোও বটে। কারণ উত্থান পতন থাকলেই বাজারে শেয়ার ব্যবসা করে সুবিধা। তবে বিভিন্ন গুজবের উপর ভিত্তি করে বাজারে ওঠানামা হলে তা ইতিবাচক নয়।

কারণ এতে করে একটি গ্রুপ বাজার থেকে সুবিধা নেয়। যারা গুজব ছড়ায় তারাই মূলত এ সুবিধা নেয়। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এডিআর কমানোর সিদ্ধান্ত বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের গবেষণা করা হয়েছে কিনা, যদি করাই হয়ে থাকে তবে গবেষণায় মান নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। কারণ এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটের তীব্রতা পুঁজিবাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

এখন আবার এডিআর সমন্বয়ের সময় বাড়ানো হলো। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে অনেকেই শেয়ারবাজারে পুঁজি হারিয়েছেন। অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে গেছে। এতে শেয়ার বিনিয়োগকারীরা যে ক্ষতির শিকার হলো তার দায় কে নেবে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংককে পুঁজিবাজারবান্ধব ও দূরদর্শী হতে হবে।

 


Comments