শরীয়তপুরের ডামুড্যায় মেসার্স এইচ.কে. ব্রিকস্ নামে একটি ইটের ভাটায় দুই শিশুসহ ২১ জন লেবারকে জিম্মি করে রেখেছে ভাটার মালিক। সংবাদকর্মীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে লেবাররা এ অভিযোগ করেন।

তাদের ভাষ্য, গত নভেম্বর মাসের শেষের দিকে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা গ্রাম থেকে ভাটার সরদারের মাধ্যমে জেলার ডামুড্যা উপজেলার শিধুলকুড়া ইউনিয়নের বড় শিধুলকুড়া গ্রামের তালতলা মেসার্স এইচ. কে. ব্রিকস্ ইট ভাটায় তারা কাজ করতে আসেন।

ভাটার তিন সরদার মোতালেব, খলিল ও জাহাঙ্গীর মিলে এই লেবারদের প্রতিজনকে ৪০ হাজার টাকা দাদন (অগ্রীম টাকা) দিয়ে কাজ দেবে বলে আশ্বাস দেন।

কিন্তু ডিসেম্বরের ১০ তারিখ পার হয়ে গেলেও লেবাররা দাদনের টাকা না পেয়ে ভাটার সরদারদের তাগাদা করেন। এরই মধ্যে ভাটার সরদাররা মালিকদের কাছ থেকে লেবারদের টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। আর সেই থেকে লেবাররা ভাটার মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

লেবাররা কয়েকবার পালিয়ে যেতে চাইলে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। ভাটার মালিক ও ভাটার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কাছে টাকা চাইলে লেবারদের মারধর করা হয় বলে জানান এসব শ্রমিকরা।

জিম্মি হওয়া এসব লেবাররা হলেন, মনি আক্তার (১৭), মো. মিজান (২২), লাকি আক্তার (৩২), ফরিদুল ইসলাম (৩৫), মৌসুম মিয়া (২৩), নুর জাহান আক্তার (১৮), ফারজানা আক্তার (১৫), লিমন (৯), মিনহাজুল ইসলাম (২১), জয়নাল আবেদীন (৪০), লিতা আক্তার (২২), মমিনুল ইসলাম মইনুল (৩৫), মহসিনা (২৫), মো. মফিজুল ইসলাম (৩২), লিপি বেগম (৩৫), মো. হাবিবুল ইসলাম (১৯), ফরিদুল হাসান (১৮), সোহেল রানা (১৫), রুমি খাতুন (১৮) ও দেড় বছরের মারিয়া ও মোহসেনা।

মনি আক্তার ও জয়নাল আবেদীনসহ অন্যান্য লেবাররা জানান, পাঁচ মাস হলো শরীয়তপুরের ইট ভাটায় কাজ করতে আসার। তাদের প্রত্যেককে ৪০ হাজার টাকা দাদন দেয়ার কথা ছিল। ভাটার সরদাররাতো দেননি, মালিকও দেননি। বরং শরীয়তপুরের এই ভাটায় জিম্মি হয়ে আছেন তারা। তারা মালিকের কাছে টাকা চাইলে, বাড়িতে যেতে চাইলে ভাটার লোকজন শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে, মারধরও করে।

লেবাররা জানান, তারা রাত ৩টা থেকে একটানা বেলা ১২টা পর্যন্ত কাজ করেন। পরে দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করেন। এত কাজ করার পরও তাদের পারিশ্রমিক দিচ্ছেন না ভাটার মালিক। শুধু তিন বেলা খাবার দেয়। তারা তাদের পাওনা টাকা ও মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

মেসার্স এইচ. কে. ব্রিকস’র ম্যানেজার আলম বেপারী বলেন, লেবাররা ঠিকমত কাজ করে না। তবুও তাদের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। তাদের শিকল দিয়ে বাঁধা, জিম্মি করে রাখা, মারধরের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে লেবাররা মাঝে মাঝে পালিয়ে যেতে চাইলে ধরে আনি। লোক দিয়ে পাহারা দেই।

ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজী আকতার বলেন, ঘটনাটি মাত্র শুনলাম। যদি এমন ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে অব্শ্যই ব্যবস্থা নেব।

 


Comments