মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিট। লিংক রোড থেকে নতুন বাজারের দিকে আসছে বাস 'সালসাবিল'। সালসাবিলের সামনে রয়েছে প্রত্যাশা নামের অারেক বাস। রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা থাকায় বেশ জোরেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন চালক।

কিন্তু হোসেন মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় এসে সালসাবিলকে সজোরে ঘেঁষে দ্রুত গতিতে পার হয়ে যায় প্রত্যাশা। উত্তর বাড্ডায় এসে যাত্রী ওঠানামা করানোর পর আবারো পেছনে পড়ে যায় প্রত্যাশা।

পুনরায় সালসাবিলকে ঘঁষা দিয়ে পার হয়ে যায় বাসটি। ততোক্ষণে সালসাবিলের একজন যাত্রীর কনুই মারাত্মকভাবে জখম হয়ে যায়। বাসের মধ্যেই তিনি আর্তনাদ করতে থাকেন।

এবার সালসাবিলের চালক বীর দর্পে চালাতে থাকেন বাস। মিনিটখানেকের মধ্যেই প্রত্যাশাকে একপাশ থেকে চাপা দেন। এরপর প্রত্যাশার সামনে দাঁড়িয়ে যান।

ইতোমধ্যেই সালসাবিলের চালকের সহকারী এবং আরেকজন নেমে গিয়ে গালাগাল দিতে থাকেন প্রত্যাশার চালককে। একইভাবে প্রত্যাশারও কয়েকজন স্টাফ গালাগাল দিতে থাকেন সালসাবিলের চালককে।

এবার বড়ো এক 'বাঁশ' হাতে বাস থেকে নেমে যান সালসাবিলের চালক। প্রত্যাশার চালককে নিচে থেকেই জানালা দিয়ে মেরে দেন এক ঘাঁ। সাথে সাথেই ফেটে চৌচির হয়ে যায় 'বাঁশটি'। কারণ, লাঠি হিসেবে চিকন যে 'বাঁশটি' সালসাবিলের চালক ব্যবহার করেছেন, তা আসলে লম্বা এক বাঁশি।

ব্যস, প্রত্যাশার চালক, চালকের সহকারীসহ কয়েকজন নেমে এসে সালসাবিলের স্টাফদের বেধড়ক মারধর করতে থাকেন। ইতোমধ্যে সেই ধোলাইয়ে উপস্থিত জনতাও সামিল হন। কে কাকে মারছে বোঝা দায়!

ততোক্ষণে বেশ কয়েকজনের জামাকাপড় ছিঁড়ে গেছে। সালসাবিলের চালককে পাশের চালের এক দোকানে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পিটুনি দেয় জনতা। পিটুনি দেওয়া লোকদের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশকেও দেখা যায়।

কয়েকজন রিক্সাচালক ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে বাস দু'টির চালককে। একজন রিক্সাচালক বলেন, শালাদের অত্যাচারে রাস্তায় নামায় যায় না। তাই একটু পেটালাম।

কিন্তু মধ্যবয়সী কয়েকজন ঠিক কী কারণে মারামারি না থামিয়ে ইচ্ছেমতো উভয়কে পেটালেন তা বোঝা গেল না। মুখলেসুর নামের এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি জানান, এরা রাস্তায় নামলেই মারামারি করে। এদের শাস্তি হওয়া দরকার। সে কারণে পিটিয়েছি।

সালসাবিল নামক ওই বাসের একজন যাত্রী বলেন, কয়েকজন এসে চালকের সহকারীকে ইচ্ছেমতো পেটাচ্ছে। এটা দেখে বাসের কয়েকজন জানতে চাইল, আপনারা কোন বাসের? প্রত্যাশার বলতেই তাদেরকে পিটিয়েছে সালসাবিলের যাত্রীরা।

তিনি আরো বলেন, ঢাকায় ১০ মিনিটের রাস্তায় অন্তত চারবার এদের কারণে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ঘুরে আসি। এরা তো বাস চালায় না, যেন রেসে নামে। একবারও আমাদের কথা ভাবে না।

পরে আরেক ট্রাফিক এসে সালসাবিলের চালককে চলে যেতে বললে, কান্নাকাটি করতে করতেই খালি গায়ে বাস চালিয়ে নিয়ে যান ওই চালক। এ সময় অঝোরে কাঁদতে থাকেন ওই বাসের চালকের কিশোর সহকারী। দেখা যায়, মারের চোটে তার মুখমণ্ডল ফুলে গেছে। কানও অনেকে সজোরে মলে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে প্রত্যাশার চালককে তখনো থেমে থেমে পিটিয়ে যাচ্ছে জনতা। একপর্যায়ে গা ছেড়ে দিয়ে চালের বস্তায় হেলান দিতে দেখে টনক নড়ে সবার। এবার তাকে মারতে থাকা বন্ধ হয়। যাত্রীরা নেমে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।

পাশ থেকে একজন আফসোস করে বলেন, আমাদের মানুষ হতে আরো বহুদিন বাকি আছে। আর এরা কোনোদিনও ভাববে না তাদের একটু গাফিলতিতে ঝরে যেতে পারে বাসে বসে থাকা জনা পঞ্চাশেক মানুষের প্রাণ!

 


Comments