ফল চূড়ান্ত হলেও কর্মজীবী মায়েদের সন্তানের কল্যাণে নেয়া ‘২০টি শিশু দিবাত্ন কেন্দ্র’ প্রকল্পে লোক নিয়োগ আটকে আছে। ৪২টি পদের বিপরীতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্তভাবে ফল প্রস্তুত করা হলেও তা প্রকাশের অনুমতি মিলছে না।

দেড় মাস পার হলেও প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে তা প্রকাশ করা যায়নি। উল্টো প্রকল্প পরিচালককে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে যেমন ক্ষোভ বিরাজ করছে, তেমনি ভাড়া নেয়া অফিসগুলো লোকবলের অভাবে বন্ধ রয়েছে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে।


এ অবস্থায় প্রকল্পটির ভবিষৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন  বলেন, কর্মজীবী নারী ও তাদের সন্তানদের কল্যাণে এ প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জোর নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দু’বছর পার হলেও প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী যুগান্তরকে বলেন, অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় নিয়োগের ফল প্রকাশ না করে তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, দিবাযত্ন বা ডেকেয়ার সেন্টার প্রকল্পে ৪২টি পদে লোক নিয়োগের জন্য ফেব্র“য়ারিতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। উল্লিখিত পদের মধ্যে ১টি হিসাবরক্ষক, ১টি কম্পিউটার অপারেটর, ২০টি শিক্ষিকা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষিকার পদ রয়েছে ২০টি। এসব পদের বিপরীতে প্রায় ১৪ হাজার আবেদন জমা পড়ে। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রায় ৫ হাজার আবেদনকারীকে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য চিঠি ইস্যু করা হয়। ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় ১২শ’ পরীক্ষার্থী।

এর মধ্যে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ১৩২ জনকে মনোনীত করা হয়। মৌখিক পরীক্ষা হয় ২৪ মার্চ। এরপর ২৮ মার্চের মধ্যে ফল চূড়ান্ত করে তা প্রকাশের জন্য অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এরপর আর অনুমোদন মেলেনি।

রাজধানী ও জেলা শহরে কর্মজীবী মায়েদের কল্যাণে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। শুরুতে ‘২০টি শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৫৯ কোটি ৮৮ লাখ ৪৯৮ হাজার টাকা।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য- কেন্দ্রগুলোয় ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের নিরাপদ দিবাযতœ সুবিধা প্রদান করা। ফলে কর্মজীবী মায়েদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার প্রাক্কালে অদৃশ্য কারণে হঠাৎ করে প্রকল্প পরিচালক শবনম মোস্তারীকে বদলি করা হয়। তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ছিল খুবই স্বচ্ছ। নিয়োগ কমিটি কোনো প্রেসার গ্রুপের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করেই বিধি মোতাবেক তদবিরমুক্ত নিয়োগের ফল চূড়ান্ত করে।

এটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী মহলটি তাদের নিয়োগ বাণিজ্যের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়ে এখন ফল প্রকাশ আটকে রেখেছে। তবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এ মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে চান। এ নিয়ে তার সততা ও সৎ সাহসের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল তা বাধাগ্রস্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে।

 

সূত্রটি জানায়, পুরো বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়কে অবহিত করা হয়েছে। কেননা কোনো প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত না হলে তাকে ৩ বছরের আগে বদলি কিংবা প্রত্যাহার করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। মাত্র সাড়ে ৪ মাসের মাথায় প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া কাউকে প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ দিতে হলে কমপক্ষে তার চাকরির মেয়াদ ৩ বছর থাকতে হবে। অথবা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও ৬ মাস চাকরির বয়সসীমা থাকতে হবে। কিন্তু শবনম মোস্তারীকে সরিয়ে যাকে প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছে তার ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রতিপালন করা হয়নি।

প্রকল্পের নতুন পরিচালক রাশেদ খান যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রকল্পের চলমান নিয়োগ খবুই ত্র“টিপূর্ণ। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে আমি মন্ত্রীকে বলে দিয়েছি, ওই নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষিকা না নিলেও ডেকেয়ার সেন্টার চালাতে পারব। আশা করছি, ১৫ জুনের মধ্যে ঢাকায় তিনটি ডেকেয়ার সেন্টার চালু করা সম্ভব হবে।’

এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকায় ১০টি ছাড়াও ঢাকার বাইরে আরও ১০টি জেলায় ডেকেয়ার সেন্টার চালু হওয়ার কথা। জেলাগুলো হল- রংপুর, গাইবান্ধা, নওগাঁ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, ভোলা ও কক্সবাজার।

 


Comments