দিনাজপুরের কোতয়ালি থানার উত্তর জয়দেবপুরের বাসিন্দা আজহার ওরফে রাজা। একটি হত্যা মামলায় ১৯৯৮ সাল থেকে ২০ বছর ধরে কারাগারে বন্দি। ২০০৫ সালে মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় ১৩ বছর কনডেম সেলে। ২০১০ সালে হাইকোর্ট নির্দোষ ঘোষণা করে তাকে বেকসুর খালাস দেয়।

কিন্তু খালাস সম্পর্কিত চিঠি ইস্যু করা থেকে শুরু করে কারাগারে পৌঁছাতে সময় লাগল ছয় বছর। অবশেষে মুক্তির সেই চিঠি সুপ্রিম কোর্ট থেকে কারাগারে পৌঁছার পরই বুধবার সন্ধ্যায় ৬টায় কনডেম সেল থেকে মুক্তি পান তিনি। অবসান ঘটে দীর্ঘ বন্দিজীবনের। তবে মাঝখান থেকে তার জীবনের মূল্যবান সময় ঝরে গেল। এ দায় কার?

দিনাজপুর জেলার কারা তত্ত্বাবধায়ক মো. সাঈদ হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, আজহারের মুক্তি সংক্রান্ত আদালতের সকল নথিপত্র বুধবার পাওয়ার পর পর্যালোচনা শেষে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।


যেভাবে মুক্তি

আজহার ওরফে রাজার মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে ২০০৫ সালে। এই রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন তিনি। ২০১০ সালে হাইকোর্ট জেল আপিল গ্রহণ করে ডেথ রেফারেন্স খারিজ করে দেয়। হত্যার দায় থেকে খালাস পায় সে।

ওই বছরেই তার মুক্তির আদেশনামা দিনাজপুর কারাগারে গিয়ে পৌঁছে। কিন্তু খালাসের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করায় সেই মুক্তির প্রক্রিয়া আটকে যায়। ২০১২ সালের পহেলা অক্টোবর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল দায়ের করতে নির্দেশ দেয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে লিভ টু আপিল না করলে রাষ্ট্রপক্ষের স্থগিত আবেদন (সিএমপি) খারিজ বলে গণ্য হবে মর্মে আদেশ দেয় আদালত।

কিন্তু লিভ টু আপিল করেনি রাষ্ট্রপক্ষ। এই আপিল না করার তথ্যও গত ছয় বছরে কারা কর্তৃপক্ষকে অবিহত করা হয়নি। ২০১৬ সালে জেল সুপার মো. সাঈদ হোসেনকে খালাসের বিষয়টি জানান বন্দি আজহার। পরবর্তীকালে আদালত প্রশাসন ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে চঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে কোন জবাব পায়নি কারাকর্তৃপক্ষ। চলতি মাসে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির এক সেমিনারে বিষয়টি উত্থাপন করেন সাঈদ হোসেন।

এরপরই লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নির্দেশে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেয় কমিটি।


চিঠিতে বলা হয়, ফৌজদারি বিবিধ আবেদন ২০৮/২০১০ এর রায়ের কপি দিনাজপুর জেল সুপার বরাবর রি-ইস্যু করা হোক।

এরপরই আপিল বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আবু তাহের ভূইয়া সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে ২০ মে ওই চিঠি ইস্যু করেন। এতে বলা হয়, দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ পিটিশন দায়েরের আদেশ দিয়েছিল আপিল বিভাগ।

কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ওই ফৌজদারি বিবিধ আবেদন (সিএমপি) তাৎক্ষণিক খারিজ হয়েছে মর্মে গণ্য হয়েছে। আজহারের মুক্তির এই চিঠি ও এ সংক্রান্ত নথি দিনাজপুর কারাগারে পৌঁছায়। এরপরই সন্ধ্যায় তাকে মুক্তি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এ সময় জেল গেটে অপেক্ষা করছিল তার বড় ভাই, আর বাড়িতে বৃদ্ধা মা।


ইত্তেফাক

 


Comments