বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার। আইপিএলের এবারের আসরের প্রথম দিকে হায়দরাবাদের কম পুঁজি থাকার পরও তার ঘূর্ণিতে অনেক ‘হারা ম্যাচ’ জিতে গিয়েছে হায়দরাবাদ। পুরস্কারস্বরূপ একাধিকবার ম্যান অব দ্য ম্যাচও হয়েছেন তিনি।

আজ হায়দরাবাদের মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে সেই রশিদ খানই অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেললেন। মাত্র ১০ বলে ৩৪ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে হায়দরাবাদকে তিনি নিয়ে যান ১৭৪ রানে। শেষ ওভারে আসে ২৪ রান। যার পুরোটাই রশিদের কৃতিত্বে।


কিন্তু তখনও দেখার অনেক বাকি। প্রথম ১০ ওভারে কলকাতা নাইট রাইডার্সের দলীয় রান ছিল দুই উইকেটে ৯৩। সেই দল হেসেখেলে জিতে যাবে এমনটাই ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনের দর্শকদের। কিন্তু রশিদ খান অবিশ্বাস্য নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসলেন।

১৭৫ রানের টার্গেটে খেলতে নামা কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ১৬১ রানেই বেঁধে ফেলেন রশিদ -সাকিবরা। কলকাতার সঙ্গে ১৪ রানে জয়ী হয়ে আইপিএলের স্বপ্নের ফাইনালে গেল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।

চার ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে তিন উইকেট শিকার করেন। উথাপ্পা, লিন ও আন্দ্রে রাসেলের মতো ম্যাচ জয়ী ব্যাটসমানরা তার হাতেই বধ হয়।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১০ বলে ৩৪ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস উপহার দেন এ আফগান তরুণ। তার ঝড়ো ইনিংসটি ছিল দুই চার ও চারটি নান্দনিক ছক্কায় সাজানো। তার ইনিংসটিই ছিল আজকের আইপিএলের হায়দরাবাদের ইনিংসে টক অব দ্য নিউজে পরিণত হয়।

গুরুত্বপূর্ণ তিন উইকেট নিয়ে কলকাতার ইনিংস জুড়ে আলোচনায় সেই রশিদ খান। ম্যাচে দুরন্ত ব্যাট ও বোলিং তাণ্ডবের সঙ্গে অসাধারণ ফিল্ডিংও করেছেন এ আফগান তরুণ।

দুটি অনবদ্য ক্যাচ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি রান আউটও করেন এই রশিদ। একথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, এ ম্যাচটিই ছিল রশিদময়!

রশিদের বোলিং নিয়ে, তার গুগলি নিয়ে সারা বিশ্বের ক্রিকেটামোদীদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা হয়। কিন্তু আজ যা করে দেখালেন তাতে দর্শকরা তাকে চিনেছে নতুনভাবে, নতুন রূপে।

ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল রশিদ খানের

শেনওয়ার্ন পরবর্তী যুগে খুব একটা লেগ স্পিনারের আধিপত্য দেখা যায়নি ক্রিকেট বিশ্বে। মাঝপথে অনেকটা সময় ব্যাটসম্যানদের কাঁপিয়ে দেয়া তেমন কোনো লেগস্পিনারের দেখা পায়নি ক্রিকেট বিশ্ব। তবে এই সময়ে সে শূন্যতাটা পূরণ করতে চলেছেন আফগান বিস্ময় বালক রশিদ খান। যার ঘূর্ণিতে এখন বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা নাস্তানাবুদ হচ্ছেন। তাকে পড়তে পারছেন না ব্যাটসম্যানরা।

শুক্রবার রাতে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে সেই লেগ স্পিনার রশিদ খানই হয়ে উঠলেন মারকুটে ব্যাটসম্যানের এক মূর্ত প্রতীক। উইকেটের চারিদিকে বল সীমানা পার করে হায়দরাবাদের পক্ষে মাত্র ১০ বলে ৩৪ রান করে নতুনভাবে আলোচনায় স্থান পেয়েছেন বিশ্বসেরা এই লেগ স্পিনার।

কিন্তু আফগান এই তরুণ বলছেন অন্য কথা। তিনি এটাকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন। ক্রিকেট সত্ত্বায় এখনও তিনি একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে লালন করেন।

ম্যাচ জয়ের পর প্রতিক্রিয়ায় নিজেই জানিয়েছেন এসব কথা। নিজের পারফর্মেন্সে খুব খুশি জানিয়ে রশিদ খান বলেন, ‘এটা আমার জন্য খুবই প্রয়োজন ছিল। আমি সব সময় নিজেকে শতভাগ উজার করে দিতে চাই সব বিভাগে। তবে আমার দক্ষতার জায়গাটাই বেশি জোর দিই। আমি আমার ব্যাটিং নিয়ে খুবই খুশি। আর শেষ দিকে এটা খুব প্রয়োজন ছিল।’

ইএসপিএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রশিদ খান আরও বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে। সেজন্য আমি বিশ্বাস করি, একজন ফিনিশার হিসেবে আমি খুবই ভালো। আমি শুধু দৃঢ়তার সঙ্গে খেলার চেষ্টা করে যাই। এজন্য সিনিয়র খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পরিকল্পনা গ্রহণ করি।’

ব্যাটিং আর বোলিংয়ের পাশাপাশি একজন ভালো ফিল্ডার হিসেবেও সুনাম রয়েছে রশিদ খানের। কলকাতার বিরুদ্ধে জয় পেতে তার অনবদ্য ফিল্ডিংও বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। দুর্দান্ত ব্যাটিং করা নীতিশ রানাকে রান আউট করে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছেন তিনি।

আর শেষ ওভারে যখন কলকাতার জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৯ রান। তখন ম্যাচ ছিল ফিফটি ফিফটি। প্রথম বলেই ব্রাথওয়েটকে সীমানা ছাড়া করলেন শিবাম মাভি। ৫ বলে প্রয়োজন ১৪ রান। শ্বাসরুদ্ধকর এই মুহূর্তে শিবাম আকাশের দিকে তুলে মারলেন। সীমানায় দাঁড়ানো রশিদ তা ধরে ফেললেন। ম্যাচ হেলে পড়ল হায়দরাবাদের দিকে। পরের বলে গিলও বাতাসে ভাসালেন বল। কিন্তু সেই রশিদের হাত ফাঁকি দিতে পারল না। পরপর দুই বলে উইকেট হারানোর পর আর জয়ের ভাগ্য হলো না কলকাতার।

নিজের এমন দুরন্ত ফিল্ডিং প্রসঙ্গে রশিদ খান বলেন, ‘ফিল্ডিং এমন একটি বিভাগ যেখানে কোনো অজুহাত চলে না। আমি নিজেকে একজন ভালো ফিল্ডার হিসেবেও গড়ে তুলছি। এজন্য কঠিন পরিশ্রম করছি। যখন আমি ব্যাট বলে ভাল করতে পারি না তখন চেষ্টা করি ফিল্ডিংয়ে পুষিয়ে দিতে। আধুনিক ক্রিকেট তাই চায়। এজন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করি।

 


Comments