তার বয়স যখন মাত্র দুই বছর, তখনই আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারায় তার বাবা। পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে জন্মভূমি জ্যামাইকা থেকে পাড়ি জমায় ইংল্যান্ডে।

এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া। হ্যাঁ, বলা হচ্ছে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের ম্যানচেস্টার সিটি তারকা রাহিম স্টার্লিংয়ের কথা।


ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন ম্যানসিটিতে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো স্টার্লিং এখন প্রতি সপ্তাহে আয় করেন ২ লাখ ৬৫ হাজার পাউন্ড। অথচ বিভীষিকাময় দিন পার করেই আজ এই পর্যায়ে আসতে হয়েছে তাকে।

ঘাত-প্রতিঘাত পাড়ি দিয়ে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেছেন বলে জীবন চলার পথে অনেককিছুই নিভৃতে সইতে পারেন এবং শান্ত থাকতে পারেন স্টার্লিং।

রাশিয়া বিশ্বকাপ মিশনে প্রথম ম্যাচে নিষ্প্রভ থাকায় ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ প্রথম একাদশের বাইরে থাকতে হতে পারে তাকে। এ নিয়েই আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। যদিও এসব নিয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন নন স্টার্লিং।

নির্ভার থেকেই বলেছেন, সময়ই বদলে দেবে সবকিছু এবং ভালো খেলা দিয়েই সব বাধা অতিক্রম করবেন তিনি। জীবনের শুরুতে আর্থিক অসচ্ছলতা থেকে শুরু করে অনেক বাধাই যেভাবে পেরিয়েছেন।

রাশিয়ায় আসার আগে খেলার বাইরের এক ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে স্টার্লিংকে নিয়ে। পায়ে বন্দুকের ট্যাটু আঁকায় তির্যক মন্তব্য আর সমালোচনার মুখে পড়েন ২৩ বছর বয়সী ইংলিশ ফরোয়ার্ড।

সেসময় অনেকেই দল থেকে তাকে বাদ দেয়ার পরামর্শও দেয়। এমনকি রাহিম স্টার্লিংবিরোধী প্রচারণায় সরব হয় ইংলিশ গণমাধ্যম।

স্টার্লিং অবশ্য পায়ে বন্দুকের ট্যাটু আঁকার নেপথ্যের কারণ বলেছেন। পায়ে বন্দুকের ট্যাটুটি স্টার্লিং উৎসর্গ করেছেন তার বাবাকে, যিনি জ্যামাইকায় গুলিতে প্রাণ হারান।

‘আমি যে পরিস্থিতিতে বড় হয়েছি, যদি সেই পরিবেশ-পরিস্থিতির মুখোমুখি হন তাহলে ট্যাবলয়েড পত্রিকা আপনাকে কী বলতে চায় সেকথায় কান দেবেন না। তারা শুধু পারে আপনার মুখের হাসি কেড়ে নিতে। তারা শুধু চাইবে আপনাকে টেনে ধরে নিচে নামাতে।’

তাকে ঘিরে সব সমালোচনার এভাবেই জবাব দিয়েছেন ইংল্যান্ড ফরোয়ার্ড, ‘ইংল্যান্ডে এখনও এমন জায়গা আছে যেখানে স্বপ্নবাজ এক দুষ্টু ছেলে তার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে পারে।’ জ্যামাইকা থেকে ইংল্যান্ডে পাঁচ বছর বয়সে মা ও বোনকে নিয়ে নানির কাছে চলে আসে রাহিম স্টার্লিং।

এরপর কঠিন কিছু সময় পার করতে হয়েছে তাদের। ‘১৫ বছর আগে আমরা টয়লেট পরিষ্কার করতাম। সেসব সময় পার করে আসার পর এখন আমরা যে অবস্থানে আছি তা নিয়ে আমি ও আমার মা গর্ব করতে পারি।’

মায়ের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ইংল্যান্ড তারকা বলেন, ‘সে যখন এই দেশে আসে তখন সে নিঃস্ব ছিল এবং স্কুলের টয়লেট পরিষ্কার করে আর কাপড় ধুয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছে। আর এখন যে একটি নার্সিং হোমের পরিচালক আর তার ছেলে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের হয়ে খেলে।

 


Comments